ভারতের তথা উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দরবার ফুরফুরা শরীফ। পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার জঙ্গিপাড়া কমিউনিটি ব্লকের একটি গ্রাম। এখানে আব্বাস সিদ্দিকির জন্ম । পীর বংশের একজন সন্তান। ফুরফুরা শরিফের বিখ্যাত পীর আবু বক্কর সিদ্দিকির চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হলেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ছোট হুজুর জুলফিকার আলীর পুত্র। তাঁর বাবা হলেন পীরজাদা আলী আকবর সিদ্দিকি। ফরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি এখন জনপ্রিতার শীর্ষে। তিনি ছোট বেলা থেকে বন্ধুদের উপকার করতেন । বড় হয়েও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
গরিব জনগোষ্ঠির সাহায্য ও সেবা করার লক্ষে ২০১৫ সালে আব্বাস ছিদ্দিকি স্বে”ছাসেবী সং¯’া তৈরি করেন, ২০১৯ সালে ফুরফুরা ‘নলেজ সিটি’ রও শিলান্যাস করেন। তাঁর এই সেবা মুলক কর্মকান্ডের জন্য সাধারণ মানুষ তাকে ভাইজান উপাধি দেন। অনেকে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন তোলেন। কিš‘ আসলেই তিনি থিওলজি বিষয়ে এম.এ পাশ করেছেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুরফুরা টাইটেল মাদ্রাসার সেন্টার থেকে এম.এ করেছেন। তারপর থেকে ইসলামি জলসার বক্তব্য প্রদান শুরু করেন। এখন থেকে বছর দুয়েক আগে যখন বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিক আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি চলাকালিন সময়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুমহলে একধরনে গুঞ্জন শোনা যা”িছল যে, ভাইজান পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির উঠানে পা রাখবেন। সেই গুঞ্জন বাস্তবে রুপ নিল ২০২১ সালে ২১ শে জানুয়ারি। তিনি একটি রাজনৈতিক দলগঠন করেন তার নাম দিলেন ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ (আই.এস.এফ) হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেন ।
আই. এস. এফ প্রথমে মিমের সঙ্গে জোট বাধার কথা থাকলেও পরে তিনি বাম কংগ্রেস ও সি.পি.এম এর সঙ্গে গাটছাড়া বেধে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতেছেন। ফুরফুরা শরিফের এই প্রথম কোন পীরজাদা দলগঠন করে সরাসরি রাজনীতির মাঠে আসলেন। ভাইজান রাজনীতিতে আসাতে পুরো ভারতে আলোড়ন তৈরী হয়েছে। সব শ্রেনীর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার লক্ষ্য করা যা”েছ। এই সময়ে পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে তাঁর মতো পপুলার বক্তা একজনও নেই। আপনি মানেন আর না মানেন।
ভাইজান বলেন, তৃনমুল কংগ্রেস বাংলাকে ১০ বছর শাসন করে আমাদেরকে কি দিলেন? একটি জিনিস দিয়েছেন সেটা হয়েছে পশ্চিম বাংলায় বিজেপিকে এনেছেন। বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) একটি সাম্প্রদায়িক দল। পশ্চিম বাংলায় আমরা বহুবছর ধরে হিন্দু মুসলমান ও অন্যান্য জাতি ধর্ম সুসম্পর্কে বসবাস করছি, এখন তার ফাটল ধরার আশংকা রয়েছে। আব্বাস সিদ্দিকি অতীতে তাঁর বক্তব্যে কিছু বির্তকের জন্ম দিয়েছে সামপ্রদয়িকতা নিয়ে কিš‘ ভাইজান বলছে আগের আব্বাস আর এখনকার আব্বাস এর মধ্যে আসমান জমিন ফারাক। পীরজাদার ভাষ্য মিডিয়া আমার বক্তব্যের বিকৃতি করে বির্তকিত করেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে না । এমনকি কোন দলেই পশ্চিমবঙ্গে একক ভাবে সরকার গঠন করতে পারবেনা। বি.জে.পির উদ্দেশ্য শুধু পশ্চিম বাংলা শাসন করা নয়। তাদের উদ্দেশ্য হ”েছ বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে আংগুল প্রবেশ করানো। আশে পাশের কোন দেশের সাথে বি.জে.পির সম্পর্ক ভাল নেই, শুধু বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভাল। মানবাধিকার কর্মী মাননীয়া সঙ্গীতা চμবর্তীর প্রশেড়বর জবাবে, পীরজাদা আব্বাস সিদ্দীকি বলেছেন ইতিপুর্বে আমি দমজুত থানার পার্শ্ব চμবর্তী , বাকুড়ার হেমন্ত এর পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করেছিলাম। ইউপিতে পুজার হয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছি। অন্যদিকে আম্ফানে ক্ষতিগ্র¯’ হিন্দু পরিবারের পাশে দাড়িয়েছিলাম। এর মধ্যে দিয়ে চμবর্তী দিদি আমাকে সাম্প্রদায়িক মনে হয় ?
( আই.এস.এফ ) ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ এর মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হ”েছ পশ্চিমবাংলার তথা গোটা ভারতের পিছিয়ে পড়া যেমন- গরিব, অবহেলিত, দলিত ও অভুক্ত জনগনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । এই ধরনের জনগন কোন ধর্মের হয় হোক তাতে কোন বাধা নেই। তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবধর্মের লোকের পাশে আছেন। এই যুদ্ধে তিনি ইন্ডিয়ান সব ধর্মের লোককে তাঁর প্লাটফর্মে চান। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি যদি তাঁর অসাম্প্রদায়িক নীতিতে অটল থাকেন তাহলে যে কোন দিন পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারত শাসন করতেও পারেন? তারা আরও মনে করেন, তিনি একজন কিংমেকার। আব্বাস বলেন আমি নেতা হতে আসিনি নেতা তৈরী করতে এসেছি। তাঁর এই মহৎ যুদ্ধে জনগন কতটা সহযোগিতার হাত বাড়াবে কি না তা সময় বলে দেবে ?
কলাম লেখক, মিঠাপুকুর রংপুর।