দীর্ঘদিন ধরে মফস্বল সাংবাদিকদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)’র সাথে জড়িত থাকার কারণে সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করার একটু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার ছোট এ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সাংবাদিক সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রথম বাঁধা পেয়েছি খোদ সাংবাদিকদের কাছ থেকেই। এক সাংবাদিক আর এক সাংবাদিককে মেনে নিতে নারাজ। বিশেষ করে কতিপয় সিনিয়র সাংবাদিক জুনিয়র সাংবাদিকদের মেনে নিতে চায় না।
প্রায় সময় সিনিয়র সাংবাদিকদের বলতে শুনি ‘ও কিসের সাংবাদিক ? ‘ও কোন মিডিয়ায় কাজ করে ? এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমি একটু নিজের কথা বলতে চাই। সালটা ১৯৯৯/২০০০ হবে লালমনিরহাট থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক লাল প্রভাত’ পত্রিকার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি। হাতীবান্ধায় একটি নিউজের ঘটনাস্থলে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলে এক সিনিয়র সাংবাদিক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তিনি ২০/২৫ জন লোকের সামনে আমাকে বলে ‘তুমি কিসের সাংবাদিক ? এই কাগজ কলম নিয়ে এই নিউজটা লিখে দাও তো তুমি কেমন সাংবাদিক ? তার কিছু দিন পর সাংবাদিক মিলন পাটোয়ারী ভাইয়ের সহযোগিতায় রংপুর থেকে দৈনিক অর্জন পত্রিকার পরিচয় পত্র পাই। সেই পরিচয় পত্র নিয়ে লালমনিরহাট এলে এক সিনিয়র সাংবাদিক পত্রিকার নাম শুনে বলেন অর্জন না অর্জুন। এটা পত্রিকার নাম না গাছের নাম ? বেশি দিনের কথা নয় ২০১১ সালের দিকে হাতীবান্ধায় এক অফিসে আমাকে ভুয়া সাংবাদিক বলে আটকিয়ে রেখে ছিলেন। সেই কর্মকতা তখন হাতীবান্ধা থানার তৎকালীন ওসি বর্তমানে সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার তাপস সরকারের কাছে আমার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেয়।
আমরা যারা বলি “ও কিসের সাংবাদিক ? ‘ও কোন মিডিয়ায় কাজ করে ? আমরা কি একবার নিজের চোখ বন্ধ করে নিজের সাংবাদিকতায় আসার সময়টা একটু চিন্তা করে দেখি ? আজ হয়তো আমরা দেশের প্রথম শ্রেণীর মিডিয়া হাউজে কাজ করি। কিন্তু আমি বা আমরা কোন মিডিয়ায় কাজ করার মধ্যদিয়ে সাংবাদিকতায় এসেছি তা কি ভেবে দেখেছি ? আপনার আমার সাংবাদিকতাও শুরু হয়েছে কোনো না কোনো নামসর্বস্ব মিডিয়া দিয়ে। নিজের দক্ষতায় আজ ভালো মিডিয়ায় কাজ করছি। আজ যে ছেলেটি নামসর্বস্ব মিডিয়ায় সাংবাদিকতা করছেন কাল সেই ছেলেটি দেশের প্রথম শ্রেণীর মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ পাবেন নিজের যোগ্যতা বলে।
এ ছাড়া প্রায় বলতে শুনি হলুদ সাংবাদিক, কথিত সাংবাদিক আর মুল ধারার সাংবাদিক। যারা নামসর্বস্ব মিডিয়ায় কাজ করে তাদের বলা হয় হলুদ বা কথিত সাংবাদিক আর যারা প্রথম শ্রেণীর মিডিয়ায় কাজ করে তাদের বলা হয় মুলধারার সাংবাদিক। আমার মফস্বল সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি মফস্বল সাংবাদিকতাটা অনেকের শুরু হয়েছে হলুদ ও কথিত সাংবাদিকতা দিয়ে। সময়ের পরিবর্তনে সেই হলুদ আর কথিত সাংবাদিক হয়ে উঠে মুল ধারার সাংবাদিক।
সব মিলে আমি একটি কথা আগেও বলেছি আজ বলছি, কতিপয় সিনিয়র নিজের সম্রাজ যাতে নষ্ট না হয় সেই জন্য জুনিয়রদের মেনে নিতে নারাজ। কিন্তু তারা জানেন না যে যত বেশি বাঁধা পায় তার সফলতা তত কাছে । আমার সাংবাদিকতার শুরুতে যারা আমাকে পথে পথে বাঁধা দিয়েছেন তাদের সাংবাদিকতা এখন আমার উপর অনেকটা নিভরশীল। ১৯৯৯-২০২১ সাংবাদিকতার এ পথ চলায় একাধিক মামলা ও হামলা মোকাবেলা করে সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন প্রতিনিধি থেকে আজ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। বাঁধা আমাকে কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে দিয়েছে। কেন আমাকে তারা সাংবাদিক হতে দিবে না ? কি আছে সাংবাদিকতায় ? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে সাংবাদিক হয়ে গেলাম। এটাই বাস্তবতা প্রিয় কতিপয় সিনিয়র সাংবাদিক সহকর্মীবৃন্দ। জুনিয়রদের ভালোবাসা দিয়ে পাশে রাখেন দেখবেন নিজে সাংবাদিকতার পথ সহজ হবে।
অনেকেই বলেন, অপসাংবাদিকতা বন্ধ করতে হবে। জি আপনাদের সাথে আমিও একমত। কিন্তু সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিক কারা করছে ? যারা যুগ যুগ ধরে সাংবাদিকতা করে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেছেন তারাই অপসাংবাদিকতার সাথে জড়িত। তাদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে গেলেই জুনিয়রদের ‘বেয়াদব’ ‘ভুয়া’ ‘কথিত’ ‘হলুদ সাংবাদিক বলে গালি দেয়া হয়। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে ‘ও তো বিএনপি-জামাত করে। ও কিসের সাংবাদিক ? জনাব, যদি কখনো আওয়ামীলীগ বিরোধীরা ক্ষমতায় যায় তখন যে ওরা বলবেন ‘ও আওয়ামীলীগ করে, ‘ ও কিসের সাংবাদিক ?
একটা অপ্রিয় সত্য কথা বলি, অনেক সিনিয়ন আছেন নিউজ লেখতে ভুলে গেছেন। কিছু ঘটলেই ফোন করে বলে’ ছোট ভাই আমি একটু ব্যস্ত নিউজটা দিও তো। বিকালে এক সাথে কফি খাবো এখন। সেই ছোট ভাই বড় ভাইয়ের সাথে কফি খাওয়ার একটা সেলফি তোলার জন্য সিনিয়নকে তার লেখা নিউজটি দিয়ে দেন। জি এটা আমার অভিজ্ঞতা।
শুভ কামনা রইল জুনিয়র সহকর্মীদের জন্য। তোমাদের পাশে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)সহ আমি ব্যক্তিগত ভাবে আছি এবং থাকবেন।
লেখকঃ
আসাদুজ্জামান সাজু, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, লালমনিরহাট জেলা কমিটি।